অধ্যক্ষের বাণী

সম্মানিত অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সুধীবৃন্দ!

মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। একই সাথে আপনাদের সবাইকে আমাদের স্কুল এন্ড কলেজের ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাচ্ছি। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমসহ চলমান বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি। এ ওয়েবসাইট হলো আপনাদের সবার সাথে যুক্ত থাকার একটি প্রয়াস।   

বলার অপেক্ষা রাখে না, ভৌগলিক ও জাতিবৈচিত্র্যের দিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা। ভৌগলিক দুর্গমতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রাপ্তি ইত্যাদি সূচকের দিক থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে অনেক পিছিয়ে। এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিদ্যালয় নেই। এছাড়া নিজেদের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করার সুযোগ না থাকার কারণে আদিবাসী শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই একটা বড় ধাক্কা খায়। দারিদ্র্য ও ভাষাগত বাধার কারণে এক সময় তারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। এ অবস্থায়, আদিবাসী শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তাদের পক্ষে শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করে উচ্চ শিক্ষিত ও আলোকিত মানবতাবাদী একদল বৌদ্ধ ভিক্ষুর উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মোনঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মোনঘর প্রতিষ্ঠার একটা উদ্দেশ্য ছিলো পার্বত্য অঞ্চলের অনাথ, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় ও শিক্ষা প্রদান করে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তাঁদের পরম ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রমের ফসল হলো বর্তমান মোনঘর ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহ। পরম পূজনীয় প্রতিষ্ঠাতাদের অবদানকে আমাদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে হবে।

মোনঘরের গঠনতন্ত্রে বর্ণিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে সংস্থার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৮০ সালে ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় নিয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রাবাসগুলোতে ৭০০-এর অধিক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। 

দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধা ছাড়া শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন। সে কারণে এখন শুধু এতিম শিশুরা নয়, প্রান্তিক এলাকার শিশুরাও মোনঘরে পড়তে আসে। তিন পার্বত্য জেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছেলেমেয়েরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন প্রকৃত অর্থে পাহাড়ের একটি মিলনক্ষেত্র।

কালের বিবর্তনে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠদান করা হয়ে থাকে। নিজেদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রতি বছর অভিভাবক সম্মেলনে অভিভাবকরা  ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে’ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি খোলার ব্যাপারে দাবী জানিয়ে আসছেন। সময়ের চাহিদা ও অভিভাবকদের যৌক্তিক দাবী বিবেচনায় নিয়ে মোনঘর কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি চালু করার সিদ্ধান্ত পাস করে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতেও উক্ত সিদ্ধান্ত পাস হয়। এছাড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এও বিদ্যমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি সংযোগ করার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে’র পরিবর্তে ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ’ নামকরণ করা হয়। এ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গভর্নিং বডির অনুমোদনক্রমে অধ্যক্ষ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের ভার আমার উপর অর্পন করা হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতার সাথে এ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং সেবাদানরত কর্মীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ - সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবো। আর শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ নয় কিংবা ভবিষ্যতে কেবল চাকরির জন্য তাদের প্রস্তুত করা নয়; শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নীতি-নৈতিকতায় গড়ে তোলা, যাতে তারা নিজেদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে যেমন গড়ে তুলতে পারে, তেমনি একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজ ও দেশের কল্যাণে নেতৃত্ব দিতে পারে। এ লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে, পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। আশা করি, অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, মোনঘর দীর্ঘ পাঁচ দশকে পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা রাখায় পাহাড়ের ‘বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমরা চাই, ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ’ তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে এটি পরম কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হোক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থী যাতে আনন্দঘন ও ভয়হীন পরিবেশে পড়ালেখা করতে পারে এবং প্রত্যেকে নিজের অফুরন্ত সম্ভাবনা বিকাশের সমান সুযোগ পেতে পারে সে নিশ্চিয়তা দিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।

একই সাথে ‘মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে’ শিক্ষা ও অন্যান্য সেবার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কী কী করা যেতে পারে সে ব্যাপারেও অভিভাবকমন্ডলীসহ সবার কাছ থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ কামনা করি। সেই সাথে ঘোষণা করছি, প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে আলাপ কিংবা পরামর্শের জন্য অধ্যক্ষের দরজা সব সময় খোলা থাকবে। কোনো বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে অধ্যক্ষ বরাবরে নির্দ্বিধায় জানানো যাবে।

পরিশেষে, মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজকে একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকমন্ডলী, স্থানীয় জনগণসহ শিক্ষা সমাজের সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। 

 

শুভেচ্ছাসহ

অশোক কুমার চাকমা

অধ্যক্ষ

মোনঘর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ

রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি-৪৫০০, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
ফোন: +০০৮৮-০৩৫১-৬১৯১৮
মোবাইল নাম্বার: ০১৭৩২৬০২৮০৫